মির্জা গালিবের একগুচ্ছ শায়েরী

১.

শতবার তো মুক্ত হলাম

প্রেমের বাঁধন থেকে আমি,

কী-যে বিপদ, মনই আমার

রয় না তো হায় মুক্তিকামী।

 

২.

আবারো মন উতলা হলো

দৃষ্টি ছুঁতে কোন গ্রাহিকার?

ডালি ভরে তাই সাজালাম

বুদ্ধি-হৃদয়-প্রাণ উপহার।

 

৩.

ফুল ফোটানো সুর আমি নই

নই বাদনের পর্দা ও সাজ

আমি কেবল পরাজয়ে

ভেঙে পড়ার একটি আওয়াজ।

 

৪.

এদিক আমি সহস্র বার

তীব্র করুণ আর্তনাদ

ওদিক তুমি- না শোনার এক

মূর্তি যেন নির্বিবাদ।

 

৫.

প্রেমে তো ধৈর্য ধারণ

কিন্তু সেটা মানে না মন

কোন প্রবোধ বোঝাই তাকে

প্রেম-হৃদয়ের রক্তক্ষরণ।

 

৬.

পরিণাম তো জানিসনে মন

তাই সীমা নেই চাওয়া পাওয়ার

বন্ধু রুপের ঝলক দেখে

সইতে পারে সে সাধ্য কার?

 

৭.

নানা ভাবে দেখাও তুমি

পান পেয়ালার কারুকার‌্য

আমার চোখের আয়নাতে তা

ধরে রাখাই অনিবার্য।

 

৮.

মিছেই এমন আপনহারা

হইনি, গালিব, পেয়েছি টের,

কিছু তো তার আছেই গোপন

নইলে এতো পর্দা কিসের?

 

৯.

কী শুনবে আর তাদের কথা

প্রেমের কঠোর সাধক যারা-

মাথার থেকে পা অবধি

পাথর ক্রমে হবেই তারা।

 

১০.

তোমার দেয়া দুঃখে আমার

কী-বা এমন ধ্বংস হবে!

বিষন্ন বাসনা আমার

যেমন ছিলো তেমনি রবে।

 

১১.

ঈর্ষাকাতর মন বলে, তার

হৃদতা আর কার সাথেই

বোধ বলে, সেই মায়াহীনের

হাত থাকে না কারো হাতেই।

 

১২.

গালিব, তোমার দুঃখ কথা

সব শুনিয়ে দেবো তাকে,

নিশ্চয়তা নেই, সে তোমায়

ডাকে কিম্বা না-ই ডাকে।

 

১৩.

কথা দিলে, আসবে, তবু

কথা তোমার থাকে কি থির!

আমার দরোজাতেই আমায়

কাজ দিলে কি দারোয়ানির।

 

১৪.

প্রেম ছাড়া তো হয় না জীবন

কিন্তু প্রেমের যাতনা যা,

ক্ষমতা নেই সে স্বাদ নেবার

বইতে পারবো না সেই সাজা।

 

১৫.

বন্দী হয়ে আছে, আসাদ

বাসনার অসংখ্য জ্বালা

বুকটা আমার যাবজ্জীবন

রক্তক্ষয়ী বন্দীশালা।

 

১৬.

ছোট্ট হৃদয়, সাধ অফুরান

এই অনুযোগ সদাই বাজে।

উতল সাগর বন্দী যেন

মাত্র একটি মোতির মাঝে।

 

১৭.

নিঠুর বন্ধু, সমব্যথী

হলে না তো কারো ব্যথায়,

যে নির্যাতন সয়নি আমার

অন্যেরা আজ বইছে সে দায়।

 

১৮.

সব যোগাযোগ ছিন্ন করে

দিও না গো, হে বেখেয়াল,

অন্য কিছু হোক না না হোক-

শত্রুতাই থাক না বহাল।

 

১৯.

কেমন করে বলবো, সকল

সর্বনাশের দায় তোমারই?

ভাগ্য আমার দক্ষ খেলায়

হয়েছে তার সহকারী।

 

২০.

বলবো কী আর মনের দশা

এই-টুকুই জেনেছি সার

খুঁজি আমি বারে বারে

কুড়িয়ে পাও তুমি বারে বারে।

 

আরো পড়ুন- মির্জা গালিবের কবিতা

You cannot copy content of this page