লালফুলের জামা- দেওয়ান আজিজ- গল্প
কয় টাহা জমছে মা? ‘ষাইট সত্তর টাহা অইলেইতো শান্তর লাইগা একটা জামা কিনতে পারুম’। অন্তর কথায় মা বেনু বেগম উত্তর দেয় না। মনে মনে ভাবে এতটুকুন ছেলের ভাইয়ের জন্য কত দরদ। আর বাপটা কী পাষাণ, একটু খোঁজ খবরও নেয় না।
বেনু বেগম অন্তর দিকে একবার চোখ তুলে তাকিয়ে আবার শাপলার মুঠা বাঁধায় মন দেয়। অন্তুও মায়ের সাথে শাপলার আঁটি বাঁধে। শাপলার আঁটি বাঁধতে বাঁধতে অন্ত আবার বলে- মা আমার লাইগা কোনো জামা লাগবো না। আমি তো বুঝি, জামা অইলেও ঈদ অইব না। শান্ত তো হেইডা বোঝে না। অরে একটা জামা কিন্না দেওনই লাগবো। ভাইয়ের কথা শেষ হতেই শান্ত মায়ের গলা ধরে বলে- ‘ঈদের আর কয়দিন বাহি আছে মা?’ মা বেনু বেগম কিছু বলার আগেই অন্তু বলে- ‘তিন-চাইর দিন বাহি আছে।’ অন্তর কথা শুনে শান্ত কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে। তারপর আবার বলে- ‘মা শাওনের লাইগা অর বাবায় কী সুন্দর একটা জামা আনছে! জামার মইধ্যে অনেক গুলাইন লাল ফুল আছে।’ বাবার কথা বলতেই বেনু বেগম একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। ‘আইজ কত্তোগুলাইন দিন হইয়া গেল আমগো কোনো খোঁজ খবর লইল না। গ্রামের মাইনষে কয় অন্তর বাহে ঢাহা গিয়া আরেকটা নিকা করছে।’ তখন অন্তর মার খুব কষ্ট হয়। চোখ থেকে কয়েক ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ে। মায়ের চোখে অশ্রু দেখে অন্তর চোখেও অশ্রু এসে যায়। অন্ত বলে- ‘মা! তুমি কান্দ ক্যান? শান্তও মা আর ভাইকে কাঁদতে দেখে বলে- ‘মা আমার জামা লাগবো না। আমি তো আর জামার কতা কই নাই।’
অন্ত শাপলা বিক্রি করে কিছু বাজার সদাই কিনে প্রতিদিন আট-দশ টাকা করে জমায়, শান্তর জামা কেনার জন্য।
আজকের টাকাসহ অন্ত হিসেবে করে দেখে পঞ্চাশ টাকা জমেছে। শাপলা বিক্রি করে বাড়িতে ফেরার সময় বাজারের গলিতে চৌকিতে বসা শার্ট-প্যান্টের ছোট ছোট দোকানগুলো ঘুরে ঘুরে দেখে। পঞ্চাশ টাকার কোনো জামা নেই। যা আছে তা শান্তর গায়ে লাগবে না। ওগুলো আরো ছোট মানুষের। অন্ত বাজার থেকে ফেরার সময় পথে মানুষের মুখে মুখে শোনে কাল ঈদের চাঁদ উঠবে। পরশু দিন ঈদ হবে। এ কথা শুনে অন্তর মনে আনন্দের ঢেউ জাগে। মনে মনে ভাবে যেমন কইরা হোক শান্তর লাইগা একটা জামা কিননই লাগবো। তাই ভেবে রাখে কাল সকালে আরো ভোরে উঠে শাপলা তুলতে যাবে। শাপলা বিক্রি করে আগে শান্তর জন্য জামা কিনবে। টাকা থাকলে সদাইপাতি কিনবে।
অন্তু শোয়ার সময় মাকে বলে- ‘মা আমারে কাইল ধলপহরের সুম ডাইক্কা দিবা। কাইল বেশি কইররা শাপলা তুলমু।
মায়ের ডাকের আগেই অন্তুর ঘুম ভেঙে যায়। অন্তু কলাগাছের ভেলাটি নিয়ে শাপলা তুলতে যাবে ভেবে ওদের ছনের ঘরের ঝাপটা সড়াতেই অন্ত দেখে কী সর্বনাশ! উঠান বানের পানিতে থৈ থৈ করছে। অন্ত বিলের দিকে তাকিয়ে দেখে একটা্ও শাপলা নেই। সব শাপলা পানিতে ডুবে গেছে। অন্তু বিষণ্ন মনে বিলের দিকে তাকিয়ে ভাবে- শাপলা তুলতে না পারলে শান্তর লাইগা ঈদের জামা কিনমু ক্যামনে।
আরও পড়ুন- ঈর্ষা গল্প