মুক্তগদ্য- ক্ষমতা
ক্ষমতা মানে দৈহিক শক্তির প্রয়োগ বা দাপট। আমাদের সমাজে প্রতিদিনই দেখা যায় দৈহিক শক্তির প্রয়োগ। যেমন- জোর প্রয়োগ করে একটি নারীর শ্লীলতা হরণ, সমাজের কেউ কেউ জোর প্রেয়োগ করে অসহায় মানুষের সহায় সম্পত্তি কেড়ে নেয়, মানুষকে হত্যা করে। ১৯৭১ এ অপারেশন সার্চ লাইট দিয়ে লক্ষ লক্ষ নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করে। পৃথিবীতে এমন নৃশংসতার নজির অত্যন্ত বিরল। পৃথিবীতে এমন একটি দৃষ্টান্ত আছে যাতে ক্ষমতার নৃশংসতার পরিচয় মেলে। মধ্য এশিয়ায় মধ্য যুগে এক সেনাপতি ছিলেন যার নাম ছিল হালাকু খান। এই সেনাপতি যেদিকে অভিয়ান চালনা করতেন, সেদিকেই রক্তপাত আর পোড়ামাটির গন্ধ পাওয়া যেত। একবার তিনি আক্রমণ করেন বাগদাদ শহর। সেই বাগদাদ শহরকে একেবারে কচুকাটা করে ফেলেছিলেন। রক্তে ভেসে গিয়েছিল নালা-নর্দমা। তার প্রতাপে কম্পিত ছিল মধ্য এশিয়া।
তার এমনই ক্ষমতার অপব্যবহার ছিল যে তার মৃত্যুর পূর্বে একটি সমাধিক্ষেত্র গড়ে তোলেন যার চারদিক ছিল কঠিন দেয়ালবেষ্টিত এবং ফটক দরজাটি ছিল একেবারে নিচু যা দিয়ে মানুষ প্রবেশ করলে মাথা নিচু করে যেতে হয়। কারণ এই হালাকু খান উন্নতশির কোন মানুষকে পছন্দ করতেন না। তাই তার মৃত্যুর পূর্বে রচনা যান এই সমাধি। যাতে কোন মানুষ উন্নত মস্তকে এই সমাধিতে প্রবেশ করতে না পারে। মৃত্যুর পরেও তার ক্ষমতা যেন চিরস্থায়ী হয়ে থাকে সেই জন্যেই তার এই পদক্ষেপ। যদিও মৃত্যু তাকে সেই ক্ষমতা দেয়নি। তাকে মাথা নত করে সমাধিস্থলে যেতে দেয়া হলো এবং মাথা নত করেই তাকে শুয়ে থাকতে হলো মাটির কবরে। ক্ষমতার কি আশ্চর্য শক্তি তা প্রমাণিত হলো হালাকু খানের কাছে। দুর্ভাগ্য চিরিদিন মানুষের ক্ষমতা যে থাকে না, তা বুঝতে পারেনি হালাকু খান। তাকে একদিন মরতে হয়, অবনত মস্তকে মাটিতে শুয়ে পড়তে হয়। শুধু মানুষের মধ্যেই না ক্ষমতা বিস্তার লাভ করে পশু-পাখিতেও। বাঘের ক্ষমতা চিরন্তন, তাই বাঘ নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করে অন্যান্য দুর্বল প্রাণিকে। একদিন তাকেও মরতে হয় বিদায় নিতে হয় পৃথিবী থেকে।
ক্ষমতা কোনদিন চিরস্থায়ী নয় ক্ষমতাবানকেও একদিন মৃত্যুর ক্ষমতার কাছে হার মানতে হবে। ক্ষমতা একটি পশুসুলভ অভিলাষ। যা চিরস্থায়ী নয়।
*হালাকু খান- জন্ম ১২১৮ খ্রি. মৃত্যু ১২৬৫। হালাকু খান একজন মঙ্গল শাসক ছিলেন। তিনি চেঙ্গিস খানের নাতি এবং মংকে খান, আরিক বোকে এবং কুবলাই খানের ভাই ছিলেন। তার নের্তৃত্বে মঙ্গলবাহিনী মধ্য ও পশ্চিম এশিয়া দখল করে পারস্যে মঙ্গল সাম্রাজ্য স্থাপন করে। তৎকালীন বাগদাদের খিলাফত হালাকু খানের অভিযানেই ধ্বংস হয়।