মির্জা গালিবের কবিতা
মির্জা গালিবের কবিতা
১.
কবুল হবে জানোই যদি
দোয়া তবে চেয়ো না আর।
প্রার্থনাহীন হৃদয় ছাড়া
কিছুই ভবে চেও না আর।
২.
না পাওয়ার ক্ষোভ অধর্ম আর
চাওয়ার স্বভাব কৃতঘ্নতা
কিন্তু, আসাদ, বাসনাতেই
দিশা হারাই, এই যা কথা।
৩.
দেয় যদি সে চাওয়ার আগেই
সে পাওয়ার তো হয় না জবাব।
সেই তো সেরা ভিখারি, যার
হাত পাতারই হয়নি স্বভাব।
৪.
সব কিছুই মেনে নেয়া
শিখে নিতে পারবো দেখো
উদাস হবার স্বভাব তোমার
না যদি যায়- উদাস থেকো।
৫.
উপবাচক হৃদয় আমার
আর কতো রয় অবনত
সাহস দাও না, হে রব, আমার
হাত ওঠাতে চাওয়ার মত।
৬.
জীবনটাতো নিজে নিজেই
কেটে যেতো যথা-তথা,
কোন কারণে তোমার মাথায়
এলো যে হায় পথের কথা?
৭.
অনুতাপেই, নিষ্ঠুরতা
বর্জনে সে শপথ নিলো
আমার বুকে মরণ শেলটা
ঠিক তার আগেই ছুঁড়েছিলো।
৮.
মেনে নিলাম, গালিব তেমন
নয়তো কিছু মান্যগণ্য,
কীবা এমন মন্দ তবু
হয় যদি তা মুফত গণ্য?
৯.
কার সাথে কোন ঘনিষ্টতা
তোমার, সে তো তুমিই জানো,
দোষ কি যদি ক্বচিৎ কভু
আমার কথাও মনে আনো।
১০.
প্রেমে কোনো ভেদ থাকে না,
জীভন মরণ কাছাকাছি।
যে সর্বনাশ প্রাণ নিতে চায়
তাকে দেখেই বেঁচে আছি।
১১.
কাঁদতে দাওনা বন্ধু আমায়
যাক না আমার অশ্রু ঝরে,
মনের বোঝা কখনো তো
নিতেই হবে হালকা করে।
১২.
কোন ভুলে যে ব্যথার কাঁদন
কাঁদতে গেলাম বঁধুর কাছে,
কে জানতো যে তার থেকেও
দ্বিগুণ ব্যথা পাওয়ার আছে।
১৩.
কথার খোঁচা দিয়েই, গালিব,
কাজোদ্বারের করছ আশা?
তোমার কটু-কাটব্যে কি
ভাবছো পাবো ভালোবাসা?
১৪.
তাকে চাওয়ার পরেই তোমার
মন কী এমন ভেবেছিলো,
চানতে চাওয়া উচিত কি নয়
সে তা কেমন ভাবে নিলো?
১৫.
অবিচারের প্রতীক ওগো
কিছু তো দাও আমার প্রতি,
অন্তত এই মর্মব্যথায়
দীর্ঘশ্বাসের অনুমতি।
১৬.
না আছে তীর ধুনকে আজ
না আছে ভয় কোনো ফাঁদের,
পিঞ্জিরাতে বন্দী জবন
কী নিরাপদ কী যে সাধের!
১৭.
হেমন্ত কী- বসন্ত কী
ঋতুভেদের বৃথাই আলাপ
সেই আমি আর সেই তো খাঁচা
পাখনা কাটার সেইতো বিলাপ।
১৮.
কুন্ডলে তার কী ফাঁদ পাতা-
বন্দী হবো কি হায় খোদা?
মান রেখো এই স্বাধীন মনের,
রয় যেন তার অবাধ্যতা।
১৯.
শতবার তো মুক্ত হলাম
প্রেমের বাঁধন থেকে আমি,
কী-যে বিপদ, মনই আমার
রয়না তো হায় মুক্তিকামী।
২০.
আবারো মন উতলা হলো
দৃষ্টি ছুঁতে কোন গ্রাহিকার?
ডালি ভরে তাই সাজালাম
বুদ্ধি-হৃদয়-প্রাণ উপহার।