মানবতা ও আশাবাদে মোহাম্মদ শামছুজ্জামানের কবিতা: মুস্তাক মুহাম্মদ

অস্থির সময়ে মানুষ বড় বেশি যান্ত্রিক হয়ে গেছে। কর্মের  বোঝা ঘাড়ে তোলা মানুষরা আরো বেশি যান্ত্রিক হতে বাধ্য। পৃথিবী অত্যন্ত গতিশীলতার সাথে এগিয়ে চলেছে। গতিশীলতার সাথে তাল মেলাতে গিয়ে মানুষের  পড়ি মরি অবস্থা। ভাবনার সময় মেলানো দুঃরহ হয়ে পড়েছ। এ সময় পৃথিবীর সব কিছু যত দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে যা অন্য কোনো সময়  হয়নি। খাপ খাওয়াতে মানুষ হিমসিম দিশেহারা। এ সময় মানুষ নিজেকে টিকিয়ে রাখতে সচেষ্ট। তাকে দ্রুত যে কোনো পরিবর্তনের জন্য তৈরী থাকতে হচ্ছে। ফলে এখন মানুষের অবকাশ কম। তারপর সৃজনশীল হয়ে নতুন কিছু সৃষ্টি  করবে তাও হচ্ছে না। কারণ নতুন কিছু সৃষ্টি বা রূপান্তর করতে হলে পরিকল্পিত দীর্ঘ মেয়াদী ভাবনা তথা সাধনার প্রয়োজন। এই অস্থির গতিশীল পৃথিবীতে তার আর সময় কোই –  ফলে যা হওয়ার তাই হচ্ছে। মানুস মানবিক সব গুণাবলী বিসর্জন দিচ্ছে। মানবতা পদে পদে লাঞ্চিত। মানুষ নিজেকে টিকিয়ে  রাখতে মরিয়া। ফলে আত্ম ছাড়া অপরকে, সমাজকে, দেশকে নিয়ে চিন্তা চেতনা, কল্যাণের কথা ভাববার অবকাশ পাচ্ছে না। এই সময়ে মুষ্টিমেয় মানুষ পৃথিবী নিয়ে ভাবে। দেশকে নিয়ে ভাবে। কবি মোহাম্মদ শামছুজ্জামান দীর্ঘদিন সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হয়ে দেশের সেবা দিয়েছেন।

সেই অভিজ্ঞতা তরুণ দেশ প্রেমিকদের কাছে তুলে দিতে –  কলমকে এখন আরো শানিত করে এগিয়ে এসেছেন। দেশের জন্য প্রত্যেক মানুষের কিছু করা উচিত। দুর্নীতি যে ভাবে দেশের প্রতিটি সেক্টরে ছেঁয়ে গেয়ে তা যদি চলতে থাকে তাহলে  জাতি হিসেবে আমাদের  ধ্বংস অনিবার্য। আমরা তা হতে দিতে পারি না।আমাদের আদি পুরুষ অনার্য,  থেকে আমরা শোষিত বঞ্চিত নিষ্পেষিত হয়েছি। এখন সময় এসছে রুখে দাঁড়ানোর।  আমাদের প্রজন্মকে হতে হবে সৃষ্টিশীল। তাদেরকে মনে প্রাণে সৃষ্টশীল কাজে মনোনিবেশ করতে হবে। এমন দেখতে পায়  মোহাম্মদ শামছুজ্জামানের  “ফোঁসোঘর ”  কাব্র গ্রন্থের “ভয় জয় ”  শিরোনামের কবিতায়। তিনি লিখেছেন “ এ মাটিকে করতে এসেছি জয়/ দানবের ভয়াল পথে চলতে নয়।/ নবান্নের উৎসব শেষে পলি’র /বুকে শস্য প্রতিমা জাগে/ আদিগন্ত কৈবর্ত্য ভ’মি মেতে উঠে নবান্ন উৎসবে / নবজাগরণের পূণ্যভূমিতে গায় জীবনের বাগে।”

একজন কবি পৃথিবীর কল্যাণে কাজ করে ।  সমগ্র পৃথিবীর তার। বর্তমান বিশ্বায়ানের যুগে কোভিড-১৯, সে মর্ম বুঝিয়ে দিয়ে গেলো। পৃথিবীকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে হলে পৃথিবীর প্রত্যেক নাগরিক তথা মানুষ জাতিকে এগিয়ে আসতে হবে । শুধু এগিয়ে আসলে হবে না যে যেখানে আছে তার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে হবে । গাফেল হলে চলবে না। অগ্র সৈনিক হতে হবে।আসুন আমরা মানুষকে ভালোবেসে  সুন্দর পৃথিবী গড়তে সবাই মিলে বদ্ধপরিকর হোই। পেছনে যা হয়েছে  তা ভুলে মানুষের পৃথিবী করার জন্য আসুন  এগিয়ে । কবি মোহাম্মদ শামছুজ্জামান  “মুক্তি ” কবিতায় লিখেছেন : “ এখন আর কিছু নয় / গন্ধমের রঙ মেখে শুধু হারিয়ে যাওয়া, / এখন পিছন ফেরা নয় / হাতে হাত ধরে বকুল গন্ধে শ্বাস নেয়া।   ”

মানুষ জ্হান জ্ঞান – বিজ্ঞান  চর্চা করে-  বিভিন্ন আবিষ্কার করছে , মানুষের কল্যাণে । কিন্তু আবিষ্কৃত যন্ত্র  কিছু অসাধু মানুষ ছদ্দবেশী  ভিলেন পৃথিবীটাকে অস্থির কওে  তুলছে।  ইসলাম  ধর্মে  ঈশ্বরের সাথে পাল্লা দেওয়া ইবলিসও  মহাজ্ঞানী  কিন্তু ইবলিস তার জ্ঞানের ভান্ডারটা ব্যবসহার করছে মানুষের বিরুদ্ধে। এ জন্য ইবলিস আমাদের  ঘৃণার পাত্র। মানুষ সমাজেও তাই। কিছু ছদ্দবেশী  মানুষ  জ্ঞান চর্চা করছে মানুষ মারার জন্য। অকল্যানের জন্য। মানুষের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হচ্ছে তার  অর্জিত জ্ঞান । যে  ছদ্দবেশী  হবে মানুষের শত্রু, ঘৃর্ণিত।  কবির মন বার বার কাঁদে, যুদ্ধ, ধ্বংস, রক্ত, মানবতা লঙ্ঘিত হলে। তিনি সেই সব মনুষ্যবিদ্বেষীদের  কাছে  বিষ্ময় সহকারে  প্রশ্ন করেছেন, “ মসিলিপ্ত তারার ঝলকে কী মেলে মুক্তির স্বাদ!” ( স্মৃতিময় দিনগুলো)। এখন সময় এসছে বিবেক বোদ জাগ্রত করে–  এসো হাতে হাত ধরে নতুন করে কল্যাণকর পৃথিবী গড়ি। অস্ত্র , য্দুধ কখনো শান্তি দিতে পারে না। হে নতুন প্রজন্ম , তোমরা এগিয়ে আসো, মানুষের পৃথিবী গড়ার জন্য।  দুর্নীতমুক্ত, প্রেমের পৃথিবী গড়তে। আসুন অগ্র সৈনিক হয়ে এগিয়ে যায় । কবি  মোহাম্মদ  শামছুজ্জামান বিশ্বায়ানের এই সমস্যা নিয়ে  স্তবক সাজিয়েছেন এভাবে “ গ্যালাক্রির স্তরে স্তরে সাজানো অ্যাপসের মাঝে / খুঁজে ফেরে দুর্বৃত্তায়নের নীল নকশা/ খোলা নেই বেরুনোর কোনো পথ।/ অধীত জ্ঞানের ডগায় কাস্তের পোঁচ / জড়বুদ্ধির মাথায় হাতুড়ির খোঁজ/ মসিলিপ্ত তারার ঝলকে কী মেলে মুক্তির স্বাদ!” ( স্মৃতিময় দিনগুলো)

আশাবাদ, মানবতা  দারুণভাবে উঠে এসেছেে মোহাম্মদ শামছুজ্জামানের কবিতায়। তিনি বার বার স্বপ্ন দেখেন মানুষের পৃথিবী হবে।   মানুষ পূজা পাবে । মানুষের আরাধনা হবে । মানুষের কল্যাণের পৃথিবীর সকল ধর্ম – কর্ম প্রতিষ্ঠান প্রথা আদালত । সব কিছু হবে মানুষের কল্যাণে। মানুষ  হবে একমাত্র  ধর্ম । যদিও বর্তমান যা হচ্ছে তা কবির চাওয়ার সম্পূর্ন  বিপরিতমুখী । তবুও আশাবাদী কবি মোহাম্মদ শামছুজ্ঝামান আশা রাখেন কল্যাণকর পৃথিবীর , মানুষের জয় হবেই।  তিনি মানব বিদ্বেষী পৃথিবীর বুকে প্রেম পদ্ম ফোঁটাবেন ,  সতেজ প্রাণে ও আগামি সবুজ পৃথিবী উপহার দেবেন । এমন কামানা আমাদের প্রত্যেকের  । কবি  “ ফোঁসোঘর ” কাব্যগ্রন্থের নাম কবিতায়  লিখেছেন “ মেরু রাতের মাঝে খুঁজে নিও নীল সন্ধ্যা,/ আর তারা ছিটকানো বিলের পদ্মপাতায়/ নব বিটপের শাখায় শাখায় / ফোঁসোঘরে জমানো বিস্মৃত শিশির বিন্দু।”

কবি মোহাম্মদ শামছুজ্জামান মানবতার আশাবাদী কবি।  বর্তমান অস্থির , গতিশীল , অমানবিক পৃথিবীটাকে মানুষের উপযোগী করতে তিনি অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন। তুলে আনছেন সমস্যাগুলো এবং আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে তা দেখায়ে দিচ্ছেন। আমাদের প্রত্যেকের উচিত , আর পিছনে পড়ে থাকা নয় ।  এগিয়ে আসুন , আমাদের সবার  একটি ধর্ম মানুষ , মানুষের কল্যাণই আমাদের একমাত্র  ধর্ম ।  মানুষের কল্যাণই আমাদের ধর্ম । যা কোনো দেশ কাল সময় বর্ণ  জাত পাতে সীমাবদ্ধ নয় । মুক্ত পৃথিবী আমাদের , আমরা এর প্রভু , আমরা আমাদের কল্যাণ করবো এই আমাদের  ধর্ম কর্ম ।  আসুন আমরা গড়ি মানুষের পৃথিবী।

আরও পড়ুন- কবিতায় নস্টালজিয়া

You cannot copy content of this page