বাগধারা ও প্রবাদ প্রবচন- ২

১. অদৃষ্টের পরিহাস- দুর্ভাগ্য, ভাগ্যের বিড়ম্বনা।

২. অধঃপাতিয়া- অধঃপতন হয়েছে যার।

৩. অনাছিষ্টি- বাজে কাজ হওয়া, অনাসৃষ্টি হওয়া।

৪. অনামুখো- অশুভ, যার মুখ দেখলে ভালো কিছু হয় না এমন।

৫. অনেক কাঠ খড় পোড়ানো- অনেক কষ্ট সাধ্যে কিছু অর্জন করা।

৬. অন্তরটিপুনি- অজান্তে কঠিন আঘাত করা।

৭. অন্ধ বিশ্বাস- গভীর ভাবে নির্বিচারে কোনো কিছূর উপর বিশ্বাস স্থাপন করা।

৮. অন্ধের নড়ি- কোনো অসহায় ব্যক্তির একমাত্র অবলম্বন।

৯. অন্ধকার দেখা- বিপদে পড়ে ভয়ে হতবুদ্ধি হয়ে যাওয়া।

১০. অন্ধকার দেখানো- কাউকে ভয় দেখানো বা বিপদে ফেলা।

১১. অন্ধকারে ঢিল মারা- কোনো বিষয়ে বিশেষ কোনো কিছু না জেনে সে বিষয়ে আন্দাজে মন্তব্য করা।

১২. অন্ধকারে থাকা- কোনো বিষয়ে সম্পূর্ণ অজ্ঞ থাকা।

১৩. অন্ধকারে হাতড়ানো- কোনো বিষয়ে কোনো জ্ঞান না থাকার কারণে  আন্দাজে অনুসন্ধান করা।

১৪. অন্নজল ওঠা- চাকরি বা কোনো কাজের পরিসমাপ্তি হওয়া।

১৫. অন্ন ধ্বংস করা- অকমর্ণ্য লোকের অতিরিক্ত খাওয়াদাওয়া।

১৬. অন্নময় প্রাণ- খাবার গ্রহণ করলে সুরক্ষা হয়।

১৭. অন্ন মারা- রুটিরুজির পথ বন্ধ করা।

১৮. অবরে সবরে- কালে ভদ্রে কোনো কাজ করা।

১৯. অবাক জলপান- চানাচুর জাতীয় খাবার খাওয়া।

২০. অভদ্রা পড়া- অমঙ্গল বা অশুভ কোনো কিছু হওয়া।

২১. অমনি এক রকম- বিশেষ ভালো বা মন্দ নয়, ভালো মন্দের মাঝামাঝি একরকম।

২২. অমাবস্যার চাঁদ- অদর্শনীয় দুর্লভ বস্তু, যা সহজে দেখা যায় না।

২৩. অমৃতে অরুচি- ভালো কোনো জিনিশের উপরও কারো স্পৃহা না থাকা।

২৪. অম্বল চেখে বেড়ানো- কোনো কাজে স্থায়ী ভাবে লেগে না থাকা।

২৫. অরণ্যে রোদন- বৃথা আবেদন, জনশূন্য কোনো স্থানে কান্নাকাটি করলে যেমন কাজে লাগে না।

২৬. অর্ধচন্দ্র দেয়া- গলাধাক্কা দিয়ে কাউকে তাড়ানো। (গলায় হাত দিয়ে ধাক্কা দেয়ার সময় হাত অর্ধচন্দ্রাকৃতির মতো হওয়া।

২৭. অর্ধেক রাজত্ব ও রাজকন্যা- অসাধারণ যোগ্যতার জন্য উত্তম পুরস্কার লাভ করা।

২৮. অলক্ষীতে পাওয়া- মন্দ অভ্যাসে পতিত হওয়া যার মাধ্যমে নিজের অশুভ হয়।

২৯. অলাভ-বাণিজ্য- এমন ব্যবসা বাণিজ্য করা যেখানে কোনো লাভ হয় না।

৩০. অল্প পানির মাছ- অল্প পুঁজির মানুষ, অল্প শিক্ষিত মানুষ।

বাগধারা ও প্রবাদ প্রবচন

৩১. অল্পের উপর দিয়ে যাওয়া- সামান্য ক্ষয়ক্ষতির মাধ্যমে কোনো কিছু থেকে অব্যাহতি পাওয়া।

৩২. অশিক্ষিতপটুত্ব- প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা লাভ না করেও কোনো বিষয়ে সহজাত ভাবে পারদর্শিতা অর্জন করা।

৩৩. অশ্বডিম্ব- ঘোড়ার ডিম বলে বাস্তব জগতে কিছু নেই, ঘোড়ার ডিম বলেতে অবাস্তব, অলীক বস্তুকে বুঝানো হয়।

৩৪. অষ্টমের পেয়াদা- জমিদারি আমলে যে পেয়াদারা খাজনা আদায় করতে গিয়ে প্রজাদের খুব অত্যাচার করতো।

৩৫. অষ্টরম্ভা- ফাঁকিবাজি করা।

৩৬. অষ্টবক্রমূর্তি- যা দেহের গঠন কুৎসিৎ।

৩৭. অস্তি-নাস্তি- থাকা না থাকার কোনো গুরুত্ব নেই এমন অবস্থা।

৩৮. অস্থির পঞ্চক- খুবই কঠিন ভাবনায় পড়া।

৩৯. অহংকারে অন্ধ- দেমাগে হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়া।

৪০. অহংকারে মাটিতে পা না পড়া- খুবই গর্বিত আচরণ করা, পা মাটিতে না ফেলে চলা।

৪১. আইচাই করা- কোনো কিছুর জন্য অস্থির হয়ে ছুটাছুটি করা।

৪২. আইবুড়ো পথ বদলানো- প্রচলিত কোনো পদ্ধতির বদলে নতুন কোনো পদ্ধতি গ্রহণ করা, বরের বিয়ে করার জন্য যাত্রাপথ বদল করা।

৪৩. আইবুড়ো ভাত- বিয়ের আগে বর ও কনের শেষ ভাত খাওয়ার সংস্কার।

৪৪. আউপাতালি- সামান্য কারণেই যে কান্নাকাটি করে।

৪৫. আউড়ি বালিশ- যে বালিশে ওয়ার পড়ানো হয়নি।

৪৬. আওতায় পড়া- প্রভাবশালী মহলের আড়ালে পড়ে যাওয়া।

৪৭. আঁক কাটা- দাগ কাটা।

৪৮. আকাল কেঁড়ে- অতি তুচ্ছ জিনিশের জন্য হাত পেতে ভিক্ষা করতেও যার সামান্য লজ্জাবোধ নেই।

৪৯. আকাশগঙ্গা- ছায়াপথ, মহাকাশের গ্যালাক্সি।

৫০. আকাশ কুসুম- আকাশে ফুল ফোটার মতো অবাস্তব বা আজগুবি বিষয়।

৫১. আকাশ থেকে পড়া- হঠাৎ কোনো অসম্ভব জিনিশের খবর শুনে চরম বিস্ময় প্রকাশ করা।

৫২. আকাশ পাতাল- স্বর্গ হতে পাতাল, সকল বিষয়।

৫৩. আকাশ পাতাল তফাৎ- কোনো বিষয়ে বিশাল ব্যবধান।

৫৪. আকাশ-ফুটো- ভিত্তিহীন, অমূলক বিষয়।

৫৫. আকাশবৃত্তি- দৈবের উপর নির্ভর করে চলা।

৫৬. আকাশ ভেঙে পড়া- হঠাৎ কোনো বিপদে পড়া।

৫৭. আকাশ হাতে পাওয়া- দুর্লভ জিনিশ অর্জন করা।

৫৮. আকাশে ছিপ ফেলা- উপর দিকে থুথু ছিটিয়ে নিজের উপরই থুথু বর্ষণ করা, নিজের অনিষ্ট করা।

৫৯. আকাশে তোলা- অতিরিক্ত প্রশংসা করে কাউকে বড় করে তোলা।

৬০. আকাশের চাঁদ হাতে পাওয়া- খুব দুর্লভ বা আশাতীত জিনিশ হাতে পাওয়া।

বাগধারা ও প্রবাদ প্রবচন

৬১. আক্কেলগুডুম- হঠাৎ বন্দুকের শব্দে ভয় পেয়ে হতভম্ব হয়ে যাওয়ার মতো।
৬২. আক্কেলদাঁত গজানো- বুদ্ধি হওয়া, বুদ্ধিতে পরিপক্ক হওয়া।

৬৩. আক্কেলমন্ত- বুদ্ধিমান, বিবেকবান।

৬৪. আক্কেল সেলামি- বুদ্ধি বা অভিজ্ঞতার অভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবার পর হুঁশিয়ার হওয়া, মূর্খতার কারণে লোকসানে পড়া।

৬৫. আখের বুঝে চলা- ভবিষ্যতের ভাবনা ভেবে কাজ করা।

৬৬. আগড় বাগড়- অর্থহীন কথাবার্তা বলা।

৬৭. আগাপাছতলা- আগাগোড়া বা আপাতমস্তক।

৬৮. আগুন হওয়া- অতিশয় রাগান্বিত হওয়া, ক্রোধে আগুনের মতো হওয়া।

৬৯. আগুন নিয়ে খেলা- বিপত্তিকর কোনো বিষয় নিয়ে হালকা ভাবে নাড়াচাড়া করা।

৭০. আঁখি-আড় করা- চোখের আড়াল হওয়া।

৭১. ঘরে আগুন দেয়া- নিজের ঘরে বিবাদ বাঁধানো।

৭২. ছাই-চাপা আগুন- যে যন্ত্রণা মনে মনে থাকে সহজে প্রকাশ করা হয় না, প্রকাশিত নয় এমন প্রতিভা।

৭৩. মুখে আগুন- মৃত্যুকামনাসূচক গালি, হিন্দু ধর্মের মৃতকে চিতায় পোড়ানোর সময় প্রথমে মুখে আগুন দেয়া হয়, এই আগুনকেই মুখে আগুন দেয়া বুঝানো হয়েচে।

৭৪. আগুন-কপালে- যার ভাগ্য কষ্টে জর্জরিত।

৭৫. বুকে আগুন, তুষের আগুন- চাপা ক্ষোভ বা চাপা ক্রোধ, যা দাউদাউ করে জ্বলে না কিন্তু স্থায়ী হয়।

৭৬. আঙুল ঘুরয়ে পাঁচিল দেয়া- সহজসরল কাজকে সহজভাবে সমাধান না করে কঠিন পথে সমাধান করা।

৭৭. আঙুলের ফাঁক দিয়ে পানি গলে না- অত্যন্ত কৃপণ ব্যক্তি, যার দ্বারা সহজে অর্থ খরচ করানো যায় না।

৭৮. আঙুল ফুলে কলাগাছ- হঠাৎ ভাগ্য পরিবর্তন ঘটে যাওয়া।

৭৯. আঙুল মটকে গাল দেয়া- কাউকে অভিশাপ দেওয়া।

৮০. আঁচল ধরে ঘোরা- স্ত্রী লোকের অনুগত হয়ে কোনো স্বামীর চলাফেরা করা।

৮১. আচাভুয়ার বোম্বাচাক-  অসম্ভব বিষয়।

৮২. আছোলা বাঁশ- জটিল সমস্যা।

৮৩. আজ-কাল করা- ক্রমাগত কোনো কাজে দেরি করা, কোনো কাজ সমাধানে গড়িমসি করা।

৮৪. আজ নগদ কাল ধার- ধারে বা বাকিতে জিনিশ বিক্রি না করা।

৮৫. আটকপালিয়া- দরিদ্র, দুঃখেকষ্টে জীবনযাপন করা ব্যক্তি।

৮৬. আটখানা করা- কোনো জিনিশ টুকরো টুকরো করে ভেঙে ফেলা।

৮৭. আটখানা হওয়া- আনন্দে অতিরিক্ত অস্থির হয়ে পড়া।

৮৮. আটঘাটবাঁধা- সকল দিকে হুঁশিয়ার হয়ে কোনো কাজে নামা।

৮৯. আটপৌরে- অষ্টপ্রহর বা সর্বদ ব্যবহার করার উপযুক্ত।

৯০. আঁটসাঁট- কোনো জিনিশ টানাটানির পর যা দাঁড়ায়।

৯১. আটা পেষা- আটার মতো সারা দেহ পিষে প্রহার করা।

৯২. আটাশে ছেলে- গর্ভের অষ্টম মাসে প্রসূত ছেলে সন্তান, যে অপুষ্ট, দুর্বল বা অক্ষম হয়।

৯৩. আঁটি চোষা- (আমের) বা যেকোনো জিনিশের সার অংশ হতে বঞ্চিত হওয়া।

৯৪. আঁটি চোষাই সার- কোনো জিনিশের নিকৃষ্ট অংশ ভোগ করা।

৯৫. আঁটিসাঁটি- নিজের যত্ন বা নিজের প্রাপ্য জিনিশ যথাযথ ভাবে বুঝে নেয়া।

৯৬. আটুনি-কষুনি- অকাজের, লোকদেখানো।

৯৭. আঁটুবাটু করা- জড়সরভাবে চলাফেরা করা।

৯৮. আঠারো আনা- অতিরিক্ত, ষোল আনার চাইতে বেশি।

৯৯. আঠারো ঘা- শরীরের নানান স্থানে এলোপাথারি আঘাত।

১০০. আঠারো পর্বে মহাভারত- সুদীর্ঘ ভাবে কোনো জিনিশ বর্ণনা করা।

আরও পড়ুন- বাগধারা ও প্রবাদ প্রবচন-১

You cannot copy content of this page