এখন অভিশপ্ত বাড়ি- সায়কা বানু- গল্প

১.

রাত দু’টো বাজে। এখনও আশা বাসায় ফেরেনি। কলেজে যাওয়ার সময় বলেছিল দুপুর দু’টোয় চলে আসবে। এখন রাত দু’টো বাজে। কোনো খবর নেই। ঢাকায় আত্মীয়-স্বজন বলতে তো গোটা চার-পাঁচেক। তাদের বাসায় খোঁজ নেয়া হয়েছে। কোথাও যায়নি। গেল কোথায়? মেয়েটা এসব চিন্তা করতে গিয়ে কখন ঘুমিয়ে পড়েছে তার খেয়াল নেই রহিমা খাতুনের।

 

২.

আশার বাবা ফারুক হোসেন ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। ‘৭১-এ পাকিস্তানিদের হাতে নিহত হন তিনি। আশার মা রহিমা খাতুন মিরপুরের একটি স্কুলে শিক্ষকতা করেন। তিন মেয়ের মধ্যে আশা সবার ছোট। বড় দুই মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। আশাকে নিয়ে তিনি মিরপুরের ১২ নম্বরের বাড়িতে ৩৫ বছর ধরে বসবাস করছেন। ফারুক হোসেন বাড়িটি তৈরি করে গিয়েছিলেন। আশা পড়াশোনার পাশাপাশি একটা কম্পিউটার ফার্মে চাকরি নিয়েছে এই কিছুদিন হল।

৩.

কলিং বেলের শব্দে ঘুম ভেঙে যায় রহিমা খাতুনের। দরজা খুলে দেখে, পুলিশ দাঁড়িয়ে।

এটা কি শহীদ ফারুক হোসেনের বাড়ি।

জি!

আমরা হাসপাতাল থেকে এসেছি। আশা কি আপনার মেয়ে?

হ্যাঁ। কি হয়েছে আমার আশার? পাল্টা প্রশ্ন করে রহিমা খাতুন।

সে এখন সুস্থ আছে। আপনাকে আমাদের সাথে একটু হাসপাতালে যেতে হবে।

৪.

হাসপাতালের বেডে ঘুমিয়ে আছে আশা। মেয়েকে দেখে কান্নায় ভেঙে পড়লেন তিনি।

কি হয়েছে আমার আশার?

ওকে হাসপাতালে এনেছেন কেন? ব্যাকুল জিজ্ঞাসা রহিমা খাতুনের

ঘুম ভেঙে যায় আশার। মায়ের দিকে তাকিয়ে কেঁদে ফেলে।

আমার সব শেষ হয়ে গেছে মা। ওরা, ওরা আমার সব…। কিছুই তার বুঝতে বাকী থাকে না রহিমা খাতুনের। পাড়ার ছেলেরা বেশ কিছুদিন ধরে বিরক্ত করছিল আশাকে।

৫.

অপরাধীরা গা ঢাকা দিয়েছে। কিন্তু তাদের আত্মীয়-স্বজনরা প্রতিনিয়ত হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। চার মাস হল আশার কলেজে যাওয়া বন্ধভ কারণ সহপাঠীরা কেমন করে যেন তাকায়। লজ্জায় বাড়ির বাইরে বেরোয় না সে।

৬.

রহিমা খাতুন স্কুল থেকে বাড়ি ফিরেছেন। রিকশা থেকে নেমে ভাড়া দিয়েছেন। এমন সময় একজন লোক এগিয়ে এসে জিজ্ঞাসা করে-

আচ্ছা আপনি কি এই মহল্লায় থাকেন?

জ্বি, বলুন।

তিন, চার মাস আগে একটা মেয়ে রেপ হয়েছিল তার বাড়ি কোনটা বলতে পারেন। রহিমা খাতুনের মুখ কালো হয়ে গেল, মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল যেন। যে বাড়িটি তিরিশ বছর ধরে শহীদ ফারুক হোসেনের বাড়ি বলে লোকের কাছে পরিচিত ছিল। মাত্র তিন মাসের মধ্যে তা ধর্ষিতা আশার বাড়ি হয়ে গেল। একই বাড়ি ভিন্ন নামে চিনবে এখন সবাই। আমার বাড়ি এখন অভিশপ্ত বাড়ি হয়ে গেল।

আরও পড়ুন- লাল ফুলের জামা