একগুচ্ছ কবিতা- নজর উল ইসলাম

এই মুখরতা

ইচ্ছেরা জানে অনাদরের কদর্যতা

চিটে ভূষির হাতে অভিমুখ আটকানো

এই স্রোত এই ছলচাতুরি দেখা ভাষ্য ইতিহাস

যতই ভেসে উঠতে চাই রঙিন ফোয়ারা দেখায়

ছেলে ভোলানো গান বেঁধে সুর তোলে

যেন পাখি-সুষমার অবর্ণন টগবগে হাসি

বেশ্যাও মানে না যা তা ভরতে হয় অমৃত বলে

নতুন পাতারা যদি সিঁড়ি না পায় অন্তত

মাটিমুখো থেকো ভাই মাটি যা দেয়

আকাশ যা দেখায়,রাত যে নিশিস্বপ্নে

প্রকৃতি সম্ভার বলে নূপুরের ছোঁয়া লাগে মনে

আশ্রমিক দাঁড়ি-কমা-সেমিকোলন উল্টোপুরাণ

ধুলোতেই আমাদের শেষ শ্রদ্ধামালা

বিভাজনে গর্জায় কেবল মুখরতা উধাও…

 

পবিত্রতা

যত মন বিলিয়ে দিই দুধ তোয়া বক বেরিয়ে আসে

মেঘের সাদায় কাশফুলের বাগান বসে

মনগান ছড়িয়ে মিশুকে মাখামাখি

শিশুমন ফিরে পাওয়া জীবন্ত যেন পাখি

 

ধুলো ওড়ে মহাদেশীয় দুরত্ব নিবিড় হয়

এ এক বাবুইয়ের ধানখেত জোড়া সমাহার

বিবর্ণ হয় আকাশ মার্জিত মহামন

শূন্যও অবর্ণন আকাশি সুজলা

 

আড়াল ভেঙে ভোর উঠে আসে,সূর্যও নীল তখন

সব আপোষ চারণক্ষেত্র ঢেউ খেলে

ঘোল বলে যারা আজও দূরের বধিরতায়

পবিত্রতা কুড়িয়ে নাও আত্মপ্রকৃতি খুঁটে…

 

জারি থাকবে বেয়ারার কবিতা

যতটা সবুজ দেখি জীবন স্মৃতির খেয়া

সব ভ্রষ্ট সব মুখ ফেরানো পরিবেশন যেন

তুঘলকি যায়নি শুধু নখদন্তের বিড়বিড়ানি

অপূরকতায় ভাসমান শামিয়ানায় ছাওয়া

 

আমি যে মাটি থেকে দেখছি সময়ের রোদ্দুর

এত লতায় পাতায় বন্দিত মেঘ ও জানে না

জানলে হেসে কুটিকুটি হত,রূপকে ভাসত

সাদা হওয়ার যেসব আলোগুণ থমকে যাচ্ছে

 

বিভাষণ শিখিনি,চাইনা তার দিব্য-নাচন

নিচে থেকে যতটা দূর দেখা যায়—বিস্মৃতি

যেদিন ভূগোল খুলব ইতিহাস হয়ে যাবে

মারকূটে দাসত্ব সাজানো নিষিদ্ধ আগুন-ওম…

 

বন্দি

সব বিশাখায় তোমার ছবি দেখি

লুপ্তপ্রায় স্মৃতি আঁকড়ে গরজে সামনে দাঁড়াই

শেষ গান বিষাদ হয়ে ওঠে

চোখের ভেতর টলটল অশ্রু নিরুপায়

মেঘ যেমন বাষ্প সঞ্চারে অসহ্য জ্বালায়

সে আগুন পুষি আমি দু’বেলা

অভিমান কাল হয়ে সঙ্গীহীনতায় মুড়ে আছে

পাখির কিচিরমিচির সার অনিবার্য থাবা

ঠিকানা হারিয়ে ফেলি না-ফেরার দেশে

ক্ষয়-লয় কিছু আসে না সসমভ্রমে

বাজারি লগ্নে পুড়ছি এমন আরোগ্য—

রঙ-ছাপ সব আজ বন্দি খোলসা-মুখোশে…

 

 আত্মস্বর : দুই

মা-যে আলোবিন্দু পৃথিবীর সেকথা বিকিয়ে দিচ্ছি জলে

বাংলা তো অহংকার আমার বটের ছায়ায় মত

প্রতিটি জাতিই বেঁচে থাকে অস্থি-বন্ধে, আর এই আমি

আমরাই হেলায় হারিয়ে ফেলছি, নিজস্ব হাড়-মজ্জা,

আমরা দেখিনা আমাদের সূর্যাস্ত, আমরা কী

বালুকাবেলায় সন্ধের গন্ধ-লালাভায় ডুবতে-ডুবতে

অন্ধকারময় লুকনো অনন্তের দিকে

একদিন এই কলকাতাতেই যেমন লাঠি হাতে ভিখারি

মায়েদের দেখি, খুঁজতে হবে নিজের শ্বাসবুক-শব্দসুতো

যাতে আমারই দরাজ মুখ বাজিয়েছিল বাজনার রোদ্দুর

আজ কেন ভেঙে যাব আমি, আজ কেন শুধুই লেজুড়

‌ ‌‌ মোহবন্দি…

ক্ষতের অন্ধকারে কেউ কী জ্বালাতে পারে খুশিখোর

কেউ কী ভগ্নডানায় ওড়ে জোছনার হলুদ বনে

নিরক্ষর সমুদ্র অভিযান অতই কী সহজপাঠ?

আমার রবীন্দ্রনাথ বুকে ছিল, আছে, একালের কেউ-কেউ

আরও-আরও যারা সাঁতার কাটছে অপার আলোয়

সেইসব আলো-মেঘ, সেইসব নীল বাসনার নীল-নীল

পাতাবাহার আজ যে বিচ্ছিন্ন স্রোতের মুখে, কিনারায়;

নীরব ধস-খাতে বিষণ্ণ বোধের নীচে আরোগ্য চাইছে

মেঘভার আমার মাতৃসুখ মুখ লুকিয়ে হাঁটছি, চোরের মত

অথচ দেশ-পৃথিবী-ভাষা সব সব-ই আছে আমাদের

কাঁপছি স্বচ্ছ আলো-জোছনায়, পোকারহস্যে ভাঙছি

মনঘর ভাঙছি বোধিগাছ যেন পরাজিত সৈনিক…

 

বিমোহন

মুখের ওপর ইতিহাস খুলে দেখানো যায়

ভেতরে গচ্ছিত গাঙের দিনগুজরান কেউ জানেই না

সব পথই পথে আটকে যাবে গোমড়া মুখে

হাসতে হাসতে ভালবাসার বিকেলগুলো মুছতে থাকে

ডানাঝাপটানোর সময় শেষ, বুকের ওপর পাথর বসিয়ে

অসহ্যকে সহ্যের ফুল-মরা দিনেও জাপটে ধরতে হয়

সমস্ত শিস-পিয়াস ভুলে সিলমোহর সাজানো

এমন জীবন টেনে আকাশকে আলোমন বলতে হবে

বাতাসকে গায়ে মেখে পদাতিক আমার আমিকে

কী ভীষণ নির্বাসন সুরেলা করে মনজমিন চিহ্নিত

কোন আশ্রয়ই মন-দেহপটে জোড়ে না—অকারণে

শুশ্রুষা বেবাক দাঁড়িয়ে থাকবে নিঃস্ব একা

বিভোর এতকিছু ঝনঝনে মুখ পাল্টে পাল্টে বেড়াব নাকি

ফুল তো হাসে তুমি কি একটুও হাসতে পারো না

তাজা সকাল আসে দিনমান হয়,যখন ইচ্ছে সাঁতরাবো

আমাকে কার্নিভাল সাজে লোক দেখানো ভালবাসতে হবে…

 

 

আরও পড়ুন- শিশির আজমের কবিতা

You cannot copy content of this page